রাব্বী মিয়া:
কারাগার শব্দটির সাথে কয়েদী, হাজতী, কারা কর্মকর্তা/রক্ষী ইত্যাদি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিভিন্ন অপরাধে দ-িত/অভিযুক্ত ব্যক্তি কয়েদী বা হাজতী হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদে এখানে অবস্থান করে। ফলে এসব হাজতী এবং কয়েদীদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন বাঁধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কেউ কেউ তাদের পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় অনেক সময় তাদের পরিবারের সদস্যরাও মানসিক ও আর্থিক কষ্টে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হয়। কারাগার আধুনিক উন্নত দেশে বন্দীদের সংশোধন ও সুপ্রশিক্ষিত করে সমাজে পুনর্বাসন করার প্রতিষ্ঠান।
এরূপ ধারণাকে দৃঢ়ভাবে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে প্রতিষ্ঠা করতে আমার স্বীয় উদ্যোগ, পরিকল্পনা এবং নির্মাণ সামগ্রী সংগ্রহ ও অর্থ সংকুলানে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে “রিজিলিয়ান্স”- নামীয় গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি নির্মাণ করা হয়।
কারাগারে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি নির্মাণের প্রেক্ষিত।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে প্রতি মাসেই আমার সরকারি পরিদর্শন থাকে। কারাগার পরিদর্শনের সময় কারাগারের অভ্যন্তরে কয়েদী ও হাজতীদের সাথে প্রায়শ কথা বলতে হয়। কারাগারের অভ্যন্তরে যে সকল হাজতী এবং সশ্রম ও বিনাশ্রম কয়েদী রয়েছেন তাদের অনেকের সাথে ব্যক্তি পর্যায়েও কথা হয়। সশ্রম কারাদ- প্রাপ্তরা কারা অভ্যন্তরে কিছু কাজে নিয়োজিত থাকেন এবং ক্ষুদ্র পরিসরে অনেক উৎপাদনের সাথেও সম্পৃক্ত থাকে। এর প্রেক্ষিতে অনেক দিন ধরে কারাগারের অভ্যন্তরে উদ্ভাবনী কিছু করার চিন্তায় মগ্ন ছিলাম।
কারাগারের অভ্যন্তরে সশ্রম ও বিনাশ্রম দ-প্রাপ্ত কয়েদীসহ স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী হাজতী রয়েছেন। তাদেরকে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত রেখে অর্থনৈতিক এবং মানসিকভাবে প্রফুল্ল রাখার বিভিন্ন প্রেক্ষিত নিয়ে ভাবতে থাকি। অনেক কয়েদী এবং হাজতী রয়েছেন যাদের পরিবার তাদের একমাত্র অর্থ উপার্জনের উপর নির্ভর করত। কিন্তু তারা কয়েদী ও হাজতী হিসেবে কারাগারে অবস্থান করার প্রেক্ষিতে তাদের পরিবারের সদস্যগণ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি চরম আর্থিক সংকটেও পড়ে।
ফলে তাদের পরিবার বিশেষ করে তাদের উপর নির্ভরশীল ছেলে-মেয়েরা স্বাভাবিক জীবনধারা থেকে বিচ্যুত হয়। এসব প্রেক্ষিতে মনে হল কারাগারের অভ্যন্তরে যারা কারাবন্দী হিসেবে দীর্ঘ মেয়াদে ও স্বল্প মেয়াদে অবস্থান করছেন তাদেরকে অর্থনৈতিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত করলে তারা নিজেরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন ঠিক একইভাবে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-েও সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন। তারই প্রেক্ষিতে গভীরভাবে ভাবতে থাকি নারায়ণগঞ্জ কারাগারে উৎপাদনমুখী কী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা যায়।
নারায়ণগঞ্জ অত্যন্ত শিল্প সমৃদ্ধ জেলা। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে শত শত গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিসহ নিটিং ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে পরিকল্পনায় আসে নারায়ণগঞ্জ কারাগারের অভ্যন্তরে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি তৈরী করার। তাহলে কয়েদী ও হাজতীদের মধ্যে অনেকেই গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কাজ করতে পারবে। ইন্ডাস্ট্রিতে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করে লভ্যাংশটা কয়েদী ও হাজতীদের মধ্যে যৌক্তিক হারে বণ্টনও করা যাবে। কারাবন্দীরা কর্মক্ষম থাকবে, স্বাবলম্বী হবে এবং কারাগারে অবস্থানকালে মানসিক বিপর্যস্ততা থেকে অনেকটুকু ভাল থাকবে। এসব ভাবনাসমূহ রচিত করে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি নির্মাণের প্রেক্ষিত।
কারাগারে গার্মেন্টস ইন্ডাস্টি তৈরীর ধারণাটি যেভাবে এলো।
জেলখানায় অপরাধীদের শুধু আটক রাখলেই অপরাধ প্রবণতা কমবে না। তাদেরকে সংশোধন করে সমাজের মূল ¯্রােতে পুনর্বাসন করতে হবে। এই ধারণা থেকে উন্নত দেশের অনেক কারাগার প্রিজনারদের পুনর্বাসনে বিভিন্ন প্রোগ্রাম নিয়ে থাকে। এই প্রোগ্রামগুলো প্রিজনারদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে যা তাদের কারাভোগ পরবর্তী জীবনে কাজে লাগে। পৃথিবীর অনেক দেশের কারাগারে গৃহীত বিভিন্ন প্রোগ্রাম আমাকে অনুপ্রাণিত করে কারাগারে কিছু করার। কয়েকটি দেশের কারাগারে গৃহীত বন্দী পুনর্বাসন প্রোগ্রাম সম্পর্কে সংক্ষেপে জানারও চেষ্টা করি।
আরব-আমারিকাতে (Prison Entrepreneurship Program) (PEP) এর আওতায় প্রিজনারদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারিগরি শিক্ষা (কম্পিউটার, ফ্রিল্যান্সিং, মেকানিকাল ইত্যাদি) প্রদান করা হয়। এই প্রোগ্রামের প্রধান উদ্দেশ্য বন্দীদো (Prison Entrepreneurship Program) করা। যাতে কারাভোগ পরবর্তী জীবনে তারা এই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তুলতে পারে।
ইথিওপিয়ার মেকেল্লে প্রিজনারদের পুনর্বাসনে “এক্সেস টু ফাইন্যান্স” ধারণাকে কাজে লাগিয়েছে। মেকেল্লে প্রিজনের স্লোগান (Creating sustainable livelihood opportunities for women and youth, reducing crime and poverty through cooperatives and skill development and introducing in-prison financial services.) এই প্রোগ্রামের আওতায় কারাবন্দীদের কারিগরি দক্ষতার উন্নয়ন ঘটিয়ে সমবায় পদ্ধতিতে মোট ৩১টি ট্রেডে (যেমনঃ কনস্ট্রাকশন, টেক্সটাইলস, কৃষি ইত্যাদি) অর্থ সুবিধা প্রদান করে অর্থনৈতিক কাজে সংযুক্ত করা হয়।
স্লোভেনিয়াতে যেসব প্রিজনার কারা অভ্যন্তরে ভাল আচরণ করে থাকে তাদেরকে ইনসেনটিভ হিসেবে কারাগারের বাইরে কাজের সুযোগ করে দেওয়া হয়। পোল্যান্ডের কারাগারগুলোতে কারা কর্তৃপক্ষ লোকাল ব্যবসায়ীদের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে কারা অভ্যন্তরে কারাবন্দীদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করে থাকে। এর বিনিময়ে কারাগার কর্তৃপক্ষ প্রিজনার প্রতি ঘণ্টায় নির্ধারিত হারে মজুরী দিয়ে থাকে।
ব্রাজিল সরকার প্রিজনারদের জন্য (Rehabilitation Through Reading) নামে চমৎকার একটি পুনর্বাসন প্রোগ্রাম চালু করেছে। কারা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত কোন বই (সাহিত্য, দর্শন ইত্যাদি) যদি প্রিজনার পড়ে শেষ করে একটি সারসংক্ষেপ লিখতে পারে তাহলে প্রত্যেক বই পড়ার জন্য ৪ দিন কারাভোগ মওকুফ পাবে। এইভাবে বই পড়ায় ইনসেনটিভ প্রদান করে প্রিজনারদের নৈতিকতার উন্নয়ন ও অপরাধী মানসিকতার পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়।
এই প্রোগ্রামগুলো সম্পর্কে জানার পর বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে বন্দী পুনর্বাসনে নতুন কিছু করার ধারণা আরও প্রকট হয়।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পূর্বে ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে প্রায় সাড়ে ৩ বছর দায়িত্ব পালন করেছি। দায়িত্ব পালনের সময় সাভার এবং আশুলিয়ায় অসংখ্য গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে সরাসরি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। একইভাবে শিল্পায়িত জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে নারায়ণগঞ্জে যোগদান করার পর বিভিন্ন গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে সরাসরি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রি এমন একটি লেবার ইনটেনসিভ ক্ষেত্র যেখানে অনেককে কর্মে নিয়োজিত করা সম্ভব। জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে অনেক কয়েদী ও হাজতী থাকে। এ বিরাট সংখ্যক কারাবন্দীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হলে এমন একটি ইন্ডাস্ট্রি তৈরী করা প্রয়োজন যেখানে অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। সে প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি তৈরীর পরিকল্পনা চূড়ান্ত রূপ পায় আমার চিন্তা জগতে।
কারাগারে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি তৈরীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
কারাগারে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি তৈরীর লক্ষ্য হল কারাগারে অবস্থানকালীন কয়েদী ও হাজতীদেরকে মানসিক বিপর্যস্ততা থেকে মুক্ত রাখা। তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনযাপনের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা। কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে মূলধন ও দক্ষতা নিয়ে তাদেরকে সমাজে পুনর্বাসিত করা। যাতে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল থাকার জন্য তারা নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তারা যাতে অর্থনৈতিকভাবে পরনির্ভরশীল হয়ে না পড়ে অথবা পরিবারের উপর বোঝা হিসেবে হাজির না হয় সেটাও আমার লক্ষ্যে ছিল।
কয়েদী ও হাজতীদের স্বাভাবিক জীবনে পুনর্বাসিত করার জন্য অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা প্রয়োজন। তারা এরূপ সুযোগ পেলে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-েও অংশগ্রহণ করতে পারবে। বর্তমান সরকার সবসময় উদ্ভাবনের বিষয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা যোগাচ্ছে, সে কারণে সরকারি কর্মকর্তাগণ উদ্ভাবনী কর্ম সৃজনে নতুনত্ব আনতে সক্ষম হচ্ছে। সরকার প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে উদ্ভাবনী চিন্তাগুলোকে বিকশিত করার জন্য উৎসাহিত করে আসছে।
হাজতী ও কয়েদীগণের কারা অভ্যন্তরে অবস্থানকালীন প্রেক্ষিত বিবেচনা করে জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি তৈরীর প্রয়াস নিয়েছি। কারাগারের অভ্যন্তরে কয়েদী ও হাজতী হিসেবে যারা অবস্থান করে তারা আমাদেরই কারো বাবা, মা, স্বামী স্ত্রী, ভাই, বোন অথবা আত্মীয়। আমাদের নিকটাত্মীয়রাই হয়ত জানা অথবা অজানা অপরাধে সম্পৃক্ত হয়ে কারাগারে অবস্থান করেন।
তারা আমাদের দেশেরই নাগরিক। তারা অনেক সময় স্বপ্রণোদিত হয়ে অপরাধে সম্পৃক্ত হয় অথবা বাধ্য হয়ে কিছু কিছু অপরাধে সম্পৃক্ত হয় অথবা অনেক সময় প্রবঞ্চনার শিকার হয়ে অপরাধ কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত হয়। তাদেরকে পুনর্বাসিত করতে হলে কারাগারের অভ্যন্তরেই কর্মে নিয়োজিত রাখা প্রয়োজন। সে উদ্দেশ্য থেকেই মূলতঃ নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি তৈরীর প্রয়াস গ্রহণ করেছি।
গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি ‘রিজিলিয়ান্স’এর শুরুটা যেভাবে হল।
বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে ক্ষুদ্র পরিসরে হস্তশিল্পের কাজ হয়ে থাকে। এটা কারাগারের ঐতিহ্য। কারাগারের অভ্যন্তরে হস্তশিল্পের পণ্যগুলো কয়েদী এবং হাজতীগণ উৎপাদন করেন।
জেলা ম্যাজিস্টেট হিসেবে দেখলাম কারাগারের অভ্যন্তরে হস্তশিল্পের উৎপাদিত পণ্যগুলো বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট কোন স্থান নেই। তখন মনে হলো কারাগারে উৎপাদিত পণ্য যথাযথভাবে বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারলে তাদের কাজের মাত্রাটা আরও বৃদ্ধি পাবে। তার প্রেক্ষিতে কারাগারের মূল ফটকের বাইরে আমার নিজস্ব চিন্তা চেতনায় এবং অর্থ সংকুলানে ‘কারা পণ্য প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র’ স্থাপন করি। পরবর্তীতে কারাগার পরিদর্শনের সময় একটি জায়গায় দেখলাম যেখানে জামদানি শাড়ি তৈরী হচ্ছে। ঐ জায়গার পাশে খালি জায়গা দেখে মনে হলো কয়েদী ও হাজতীদের জন্য উদ্ভাবনী চিন্তাটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
কারাগারের অভ্যন্তরে প্রায় ৬ হাজার বর্গফুটের খালি জায়গাটি দেখে মনে হলো গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি তৈরী করা যায়। কারাগারের অভ্যন্তরে ঐ জায়গায় আমার স্বপ্নের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি তৈরীর মাধ্যমে স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্র খুঁজে পাই। সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই আমার ভেতরে এই স্বপ্নটি জাগিয়ে দেওয়ার জন্য। যার প্রেক্ষিতে প্রায় ৬ হাজার বর্গফুটের মধ্যে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির নির্মাণ শুরু করি। শূন্য হাতে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি নির্মাণের কাজ হাতে নিই।
অভিজ্ঞতার আলোকে দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো অর্থ কোন সমস্যা হবে না। এটা নির্মাণ করতে পারব। কেননা ঐ সময়ের মাঝেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বাসভবনসহ অনেক স্থানে অনেক সুন্দর সুন্দর উদ্ভাবনী কাজ করেছি। যেখানে সরকারি অর্থের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ের অনেকে সহযোগিতা করেছেন। নারায়ণগঞ্জ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হওয়ায় অর্থ নিয়ে কোন চিন্তা ছিল না। জেলায় বিত্তবানদের কাছে স্বপ্নের প্রকল্পটির কথা যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করতে পারলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনেকেই সহযোগিতা করবেন বলে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। সে দৃঢ় বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই নারায়ণগঞ্জ কারাগারের অভ্যন্তরে এ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি নির্মিত হয়েছে।
গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি নির্মাণে প্রেরণা হিসেবে যেসব বিষয় কাজ করেছে।
ছোটবেলা থেকে আমার বাবা ছিলেন আমার নায়ক, আমার আদর্শ এবং আমার পথপ্রদর্শক। বাবা-মার জন্য শ্রদ্ধার জায়গাটা কবে তৈরী হয়েছিলো তা স্মরণ করতে পারছি না। আমি আজন্মই পিতা-মাতা ও গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ছোটবেলা থেকে কখনোই কারও সাথে খারাপ আচরণ করিনি। জানা মতে কখনও কারও সাথে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হইনি। সবসময় চেষ্টা করি মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করার জন্য। মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য। মানুষে মানুষে যে বিভাজন তা আমাকে খুব স্পর্শ করে। মানুষের কল্যাণে কাজ করা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার বড় পরিচয় আমি একজন মানুষ। মানবতার কল্যাণে কাজ করা, শ্রদ্ধা জানানো, ভালবাসা এগুলো পারিবারিকভাবে শিখেছি।
জেলা কারাগারের কারাবন্দীদের কয়েদী ও হাজতী হিসেবে দেখার চেয়ে মানুষ হিসেবেই দেখেছি। যে কারণেই হোক না কেন অনেকে হয়ত মৃত্যুদ- প্রাপ্ত, যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত আসামী। তাদের মানসিক অবস্থা চিন্তা করে ব্যথিত হই। এগুলো চিন্তা করলে মানবতার কল্যাণে কাজ করার উদ্দীপনা খুঁজে পাই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যের অংশ বিশেষ আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছে। গত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে আলোকপাত করেছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর রাজনৈতিক বন্দীজীবনের ঘটনাবলী আবেগঘনভাবে তুলে ধরার এক পর্যায়ে প্রায় নিম্নরূপভাবে বলেছিলেন, ‘বাবার সাথে দেখা করার একমাত্র জায়গা-ই ছিলো কারাগার’ তাঁর এ বক্তব্য আমাকে আরও বেশী উৎসাহ, প্রেরণা এবং শক্তি জুগিয়েছে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে।
কাজটি শুরু করতে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে কী-না।
গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি নির্মাণের শুরুতে প্রতিবন্ধকতার কথা চিন্তা করিনি। জেলা প্রশাসক হিসেবে আমি অনেক বেশী আত্মনির্ভরশীল। আমার আত্মবিশ্বাসও অনেক দৃঢ়। ছাত্র জীবনেও অনেক আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করি। অনার্সেও প্রথম স্থান অর্জন করি। তা অর্জন করতে অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনাকালীন দেখেছি প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে কিভাবে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা যায়। যা আমাকে অনেক দৃঢ়ভাবে আত্মবিশ্বাসী করেছে।
প্রতিবন্ধকতাকে সম্ভাবনা হিসেবে দেখি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স ফাইনালের মৌখিক পরীক্ষায় ইচ্ছাকৃতভাবে থার্ড ক্লাস মার্কস দেয়ার পরও প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করি এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষকও হই। তাই প্রতিবন্ধকতা জয় করে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান আমাকে বাস্তবিকভাবে আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্মবিশ্বাসী করেছে।
গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি তৈরীর উদ্যোগ গ্রহণের প্রাক্কালে অর্থ সংকুলানের বিষয়গুলো চ্যালেঞ্জের মধ্যে ছিল। তবে বিশ্বাস ছিল এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারব। অর্থ সংকুলানের ক্ষেত্রে বেছে নিয়েছি নারায়ণগঞ্জের এমন কিছু মানুষ এবং প্রতিষ্ঠান যাদের কোন রকমের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির বিষয় নেই। প্রথমদিকে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রি তৈরীর মূল প্রতিবন্ধকতা ছিল অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করা। আজ অত্যন্ত আনন্দিত, অর্থ সংকুলানের যে চ্যালেঞ্জ ছিল তা নতুন নতুন দ্বার উন্মুক্ত করেছে। ফলে অর্থনৈতিক কোন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়নি।
গার্মেন্টস তৈরীর ফলে কারাবন্দীরা কীভাবে সুবিধাগুলো ভোগ করবে।
গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রিতে উপযুক্ত কয়েদী ও হাজতীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে গার্মেন্টস-এর বিভিন্ন সেকশনে নিয়োজিত করা হবে। গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রিতে কাঁচামাল প্রক্রিয়াকরণ থেকে শুরু করে পণ্য উৎপাদনে বিভিন্ন প্রকারের শ্রমের প্রয়োজন। সুইং, নিটিং, কাটিং, আয়রনিং, ফিনিশিং, প্যাকেজিং, সরবরাহ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ আরো অনেক বিভাগে কারাবন্দীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে কর্মে নিয়োজিত করা হচ্ছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য যথাযথ প্রক্রিয়ায় বাজারে বিক্রি করে যে মুনাফা অর্জিত হবে তার অধিকাংশ মুনাফা কয়েদীদের প্রদান করা হবে। তবে তাদের নামে একাউন্ট খুলতে আইনগত কোন সমস্যা হলে আইনের
আওতায় প্রত্যেকের নামে একটি করে হিসাব সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করা যাবে। এ হিসাব সংরক্ষণের মাধ্যমে কারাবন্দীগণ মাসিক অথবা বাৎসরিক অথবা এককালীন ভিত্তিতে তাদের উপার্জিত অর্থ ব্যবহার করতে পারবেন। একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কারাবন্দীদের স্ব-স্ব নামে অর্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যাতে করে তারা বিশ্বাস রাখতে পারে তাদের উপার্জিত অর্থের যথাযথ হিস্যা তারা পেয়েছেন। এ প্রক্রিয়াটির জন্য আমাদের দাপ্তরিক কিছু কাজ করতে হবে। এটি পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসন, জেলার সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তা ও কারাগারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি উপযুক্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে যারা আর্থিক বিষয়গুলোসহ অন্যান্য বিষয়াদি যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করে সকলের সামনে উপস্থাপন করতে পারবে।
গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল শ্রমিকের সংস্থান কীভাবে করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রির জন্য এমনিতেই বিখ্যাত। কাঁচামাল সরবরাহের জন্য কোন রকমের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কমিটির সদস্যদের মাধ্যমে এসব কাঁচামাল বাইরে থেকে নিয়ে আসার জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা রয়েছে। বিকেএমইএ, চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য। আইনের আওতায় প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কারাগারের
অভ্যন্তরে সরবরাহ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কাঁচামাল কারাগারের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে স্ক্যানিং করা হচ্ছে। যাতে কাঁচামালের ভেতরে কোন রকম অবৈধ জিনিস কারাগারের অভ্যন্তরে কেউ না আনতে পারে সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি নিশ্চিতের ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের সুযোগ রয়েছে বিকেএমইএ’র মাধ্যমে এসব প্রশিক্ষিত, অর্ধপ্রশিক্ষিত অথবা অপ্রশিক্ষিত কয়েদী ও হাজতীদেরকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় প্রশিক্ষণ প্রদান করে কর্মে নিয়োজিত করার। এ শিল্পে কারাগারের বাইরের কোন শ্রমিককে নিয়োজিত করা হবে না। প্রয়োজন হলে জেলকোড অনুযায়ী উৎপাদন কর্মকা-কে প্রসারিত করার জন্য বাইরের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করা হবে। আমরা জেলকোডসহ প্রচলিত অন্যান্য আইনের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধাশীল। আইনের ব্যতয় না ঘটিয়ে এ শিল্পটি পরিচালনা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
“রিজিলিয়ান্স” নির্মাণে যাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
এ উদ্যোগের সাথে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করাসহ আর্থিক ও অন্যান্যভাবে অনেকেই সহযোগিতা করেছেন। জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণ, কয়েকজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনারগণ আমাকে সবসময় সহযোগিতা করেছেন। কারাগারের অভ্যন্তরে এ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রি নির্মাণে জেল সুপার, জেলার, ডেপুটি জেলার সার্বক্ষণিক প্রত্যক্ষভাবে এ কাজে আমাকে সহযোগিতা করেছেন। কাঁচামাল বা নির্মাণ সামগ্রীসহ অর্থ ব্যবস্থা করে দিয়েছি কিন্তু কাজটির তদারকি করা এবং যথাযথ সময়ে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে তাঁরা প্রত্যক্ষভাবে অবদান রেখেছেন। আমার পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় সকলে এ কাজে সহযোগিতা করায় আমি কৃতজ্ঞ।
এছাড়া প্রথমে ভেবেছিলাম এ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রিটি সরাসরি বেসরকারি অর্থ সংকুলানের মাধ্যমে নির্মাণ করব। পরবর্তীতে কৌশলগত কারণে বেসরকারি অর্থ সংকুলানের পাশাপাশি সরকারি অর্থ সংকুলানের প্রয়াস গ্রহণ করি। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে মনে করেছি সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানের অর্থ সম্পৃক্ত করতে পারলে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কাজ করে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান তৈরী করা সম্ভব; তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হবে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রি। সে কারণে উপ-পরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর, নারায়ণগঞ্জ এর সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করি। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় জেলা সমাজ কল্যাণ পরিষদ রয়েছে। এ পরিষদের সভাপতি জেলা প্রশাসক। এ রকম কাজে খরচ করার জন্য বেশ কিছু অর্থ এ পরিষদে ছিল। সে প্রেক্ষিতে সমাজসেবা অধিদপ্তরে পত্র প্রেরণ করি। সমাজসেবা অধিদপ্তর গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রির মেশিনারিজ কেনার জন্য অর্থ সরবরাহ করে। সরকারের দিক থেকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সংকুলান ছিল।
এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রি তৈরীতে অনেকেই সহযোগিতা করেছেন। গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রি তৈরীতে যত ইটের প্রয়োজন ছিল তা দিয়েছে সদর উপজেলার ইটভাটা মালিক সমিতি। যত সিমেন্টের প্রয়োজন ছিল তা ক্রাউন ও লাফার্স সিমেন্ট সরবরাহ করেছে। তেমনি রড, টিন পেয়েছি অপরাপর দানশীল ব্যক্তিগণের কাছ থেকে। এখানে যত টাইলস ব্যবহার করা হয়েছে তা আজাদ-রিফাত ফাইবার্স সরবরাহ করেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, আমরা কোন আর্থিক লেনদেন সরাসরি করিনি। জেলা প্রশাসক হিসেবে কারাগারের অভ্যন্তরে এ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রি নির্মাণে একটি টাকাও নগদ গ্রহণ করিনি। গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রি নির্মাণের প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী দানশীল ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান নিজেরা সরবরাহ করেছে। ফলে আমরা আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পেরেছি। অনেকে নগদ টাকা দেয়ার কথা বললেও নিরুৎসাহিত করেছি। ফলে তাঁরা আমাদেরকে নির্মাণ সামগ্রী প্রদান করেছেন। জেলা প্রশাসক হিসেবে তাঁদের এ সহযোগিতায় আমি কৃতজ্ঞ।
২০১৭ খ্রিস্টাব্দের মাঝে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রি নির্মাণ কাজ শেষ করার জোরালো প্রচেষ্টা শুরু করি। নির্মাণ কাজের একেবারে শেষপর্যায়ে মনে হল, যেহেতু এটি কারা অভ্যন্তরে নির্মিত হচ্ছে; কারা অধিদপ্তরের আর্থিক সংশ্লেষ প্রয়োজন। সে কারণে আমি গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীকে অনুরোধ করি গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রিজের দরজা-জানালা এবং অবশিষ্ট কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য। কিন্তু তিনি জানান, এক্ষেত্রে আর্থিক সঙ্কুলানের ঘাটতি রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমি উনাকে সম্মানিত আইজি প্রিজনের সাথে সাক্ষাৎ করার পরামর্শ প্রদান করি।
আইজি প্রিজন মহোদয়কে আমার সাথে টেলিফোনে কথা বলিয়ে দিতে বলি। পরে জেল সুপার ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আইজি প্রিজন মহোদয়ের সাথে দেখা করেন। আমি ফোনে আইজি প্রিজন মহোদয়কে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রি নির্মাণের অগ্রগতি তুলে ধরে অর্থ সংকুলানের জন্য অনুরোধ করি। তিনিও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের আশ^াস দেন। কারা অধিদপ্তর থেকে তারপর কিছু অর্থ পাই। সে কারণে কারা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই আমার স্বপ্নের প্রকল্পে আর্থিক সহযোগিতা করায়।
মূলতঃ সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং কারা অধিদপ্তর এ দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সহযোগিতা নিয়েছি। কারা অধিদপ্তর থেকে অর্থ নিয়েছি যাতে এ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রিটিকে তারা নিজের মনে করে। কারো অধিক্ষেত্রে কোন কিছু নির্মিত হলে এবং সেক্ষেত্রে ঐ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সংশ্লেষ থাকলে সেটাকে তারা নিজের মনে করে ভালবাসবে।
পাশাপাশি সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহযোগিতা নিয়েছি যেহেতু তারা পুনর্বাসনের কাজ করে। উপ-পরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর এক্ষেত্রে অনেক আন্তরিক ছিল। একারণে এ দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সহযোগিতা গ্রহণ করেছি। সরকার এবং ব্যক্তি পর্যায়ের সহযোগিতায় স্বপ্নের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হল। ভবিষ্যতে সরকার ও বেসরকারি সহযোগিতায় আরো বড় ধরনের মানবিক প্রকল্প বাস্তবায়নে এটা দৃষ্টান্ত হবে। জেলা প্রশাসকের প্রতি নারায়ণগঞ্জের আপামর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। তাই শুধু কারাগারের অভ্যন্তরে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রি নির্মাণ-ই নয় নানা ক্ষেত্রে তাঁরা আমাদের সহযোগিতা করেছেন। সে কারণে নারায়ণগঞ্জে আমরা অনেক উদ্ভাবনী ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারছি।
বেসরকারিভাবে যারা সহযোগিতা করেছেন তাঁদের সম্মানিত করার পরিকল্পনা।
যারা নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তাঁদেরকে যথাযথভাবে সম্মানিত করা হবে। যাতে তাঁরা বুঝতে পারেন জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করলে তাঁদেরকে সম্মানিত করাসহ স্বীকৃতিও প্রদান করা হয়। এ কাজে সহযোগিতা করায় সকলকে যথাযথ সম্মান প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে ভবিষ্যতেও সরকারি বিভিন্ন কর্মকা-ে উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে তাঁরা সহযোগিতার দ্বার উন্মুক্ত রাখেন।
কারাবন্দীদের মধ্যে যে ধরনের বন্দীরা এ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রিতে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মূলতঃ আমাদের লক্ষ্য থাকবে কারাগারে দীর্ঘ মেয়াদী যেসব কয়েদী এবং হাজতী রয়েছে তাদের প্রতি। তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিব যারা দীর্ঘ মেয়াদে কারাগারে অবস্থান করবেন। তাদেরকে প্রাধান্য দেয়া হবে যারা দীর্ঘদিন শ্রম দিতে পারবেন। এক সময় প্রশিক্ষিত কয়েদী/হাজতীরা নিজেরাই অন্য বন্দীদের প্রশিক্ষণ দিতে পারবেন। তাদেরকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি বাংলাদেশের মূল অর্থনৈতিক কর্মকা-েও সম্পৃক্ত রাখতে পারব। তাই গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রিতে শ্রমিক নিয়োগ করার ক্ষেত্রে কয়েদী ও হাজতীগণ কারাগারে কতদিন অবস্থান করবে তার উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হবে।
“রিজিলিয়ান্স” এ বিকেএমইএ’র সহযোগিতার ক্ষেত্রসমূহ।
গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রি তৈরী হওয়ার পর বিকেএমইএ’র সহযোগিতা করার সুযোগ রয়েছে। কর্মযজ্ঞ চালু হওয়ার পর প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে বিকেএমইএ সহযোগিতা করতে পারবে। শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ হবে না। এ গার্মেন্টসে উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রয় করার পর যদি বিদেশেও বিক্রি করার প্রয়োজন হয় তাহলে বিকেএমইএ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
এক্ষেত্রে বিকেএমইএ এর সভাপতি মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব একেএম সেলিম ওসমান সবসময় সহযোগিতা করে আসছেন এবং ভবিষ্যতে এ সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করি। এ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রিতে উৎপাদিত পণ্য পরিমাণগত দিক দিয়ে অল্প হলেও এর যে গুরুত্ব তা সারাবিশ্বে সমাদৃত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কেননা এ পণ্যটি হল কারাগারের অভ্যন্তরে কয়েদী ও হাজতীদের দ্বারা উৎপাদিত। এমনও হতে পারে দেশে এবং বিদেশে যে সকল কারাগার রয়েছে সেখানেও প্রাসঙ্গিক ইন্ডাস্ট্র্রি তৈরীর মডেল হতে পারে এ ইন্ডাস্ট্রি।
আশা করব বিকেএমইএ’র সহযোগিতা সবসময়ই অটুট থাকবে। বাজারজাতকরণে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। “রিজিলিয়ান্স” এ উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে বিকেএমইএ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
এ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রিতে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করার প্রক্রিয়া।
কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মিত এ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রিতে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করার বেশ কয়েকটি পন্থা অবলম্বন করার প্রয়াস নিয়েছি। প্রথমত জেলা কারগারের মূল ফটকের বাইরে “কারাগারে উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র” এ প্রাথমিকভাবে প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের সুযোগ রয়েছে।
এছাড়া আমরা চেষ্টা করছি আড়ংসহ বড় বড় দেশীয় পণ্যের ব্র্যান্ডগুলোর সাথে চুক্তি করতে। বিশেষত আড়ং এর সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে পারলে কারাগারে উৎপাদিত পণ্য বিক্রির একটি শক্ত ভিত রচিত হবে। এছাড়া বাজারজাতকরণের পাশাপাশি প্রচারণার কাজটিও করা যাবে। আড়ং এর মাধ্যমে তা করতে পারলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কারাগারে নির্মিত গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রি সম্পর্কে মানুষের মাঝে ইতিবাচক জাগরণ সৃষ্টি হবে। কারাগারে উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণ যদি বেশি হয় সেক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করবো স্থানীয় বাজারে বাজারজাতকরণের পর অবশিষ্টাংশ বিকেএমইএ’র মাধ্যমে দেশের বাইরে রপ্তানি করার। তা করতে পারলে অর্থ উপার্জনের চেয়ে বিদেশে গুণগতভাবে দেশের সম্মান বৃদ্ধি পাবে।
সারা বিশ্ব আমাদের দেশকে নতুন করে চিনতে পারবে। বাংলাদেশ বন্দিদের মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য কারাগারের অভ্যন্তরে এরূপ ইন্ডাস্ট্রি নির্মাণ করেছে। আন্তর্জাতিক পরিম-লে হাজার হাজার গার্মেন্টেস ইন্ডাস্ট্র্রি থাকার পরও এ ইন্ডাস্ট্রি এক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে। নিজস্ব স্টল, আড়ংসহ অন্যান্য দেশীয় ব্র্যান্ড এবং বিকেএমইএ’র মাধ্যমে কারাগারে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।
‘রিজিলিয়ান্স’ পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়াদি ও পদ্ধতি কীরূপ।
গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রি তৈরী যতটুকু কষ্টসাধ্য, এর লাভজনক ও মানসম্মত পরিচালনা তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। তেমনি কারাগারের অভ্যন্তরে যে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রি আমরা নির্মাণ করেছি এখন এর পরিচালনা আমাদের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
এ প্রেক্ষিতে “রিজিলিয়ান্স” এর সুষ্ঠু পরিচালনার নিমিত্ত বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা হলেন-(১) অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, নারায়ণগঞ্জ (২) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, (৩) আবাসিক মেডিকেল অফিসার, (৪) উপ-পরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর, (৫) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, গণপূর্ত অধিদপ্তর, (৬) জনাব মোহাম্মদ হাতেম, প্রাক্তন সহ-সভাপতি, বিকেএমইএ (৭) জনাব অমল পোদ্দার, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মেট্রো নিটিং (৮) জনাব মোফাজ্জল হোসেন মিন্টু,(৯) জনাব মোঃ মোরশেদ সারোয়ার, (১০) জনাব লায়ন মোঃ মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া, (১১) জেল সুপার, জেলা কারাগার, নারায়ণগঞ্জ।
এ কমিটি কারাগারে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রির কাঁচামাল সরবরাহ থেকে শুরু করে উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় করা পর্যন্ত সমস্ত কার্যক্রম স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং দৃঢ়তার সাথে পরিচালনা করবে।
এছাড়া বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কারাগার পরিদর্শক বোর্ডের সম্মানিত সভাপতি এবং প্রতি মাসেই কারাগার পরিদর্শন করে থাকেন। অন্যদিকে কারাগারের ত্রৈমাসিক সভায় বেসরকারি কারা পরিদর্শকসহ সরকারি যেসব কারা পরিদর্শক রয়েছেন তাঁরা সকলে মিলে এ কাজগুলোর দেখভাল করতে পারবেন। পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে যে প্রতিবেদন পাওয়া যাবে তার মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটিকে পর্যালোচনা করারও সুযোগ থাকবে। তাই পরিচালনা কমিটির কার্যক্রম এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাতে কারা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রিতে কোন রকম বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না হয়। কয়েদী ও হাজতী যারা এ পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত থাকবে তাদের বিশ^াস ও আস্থার কোন সংকট যাতে না হয় সে বিষয়টি গুরুত্বসহ বিবেচনায় রাখতে হবে। যারা সশ্রম কারাদ-প্রাপ্ত কয়েদী তারা কিন্তু কাজ করার ব্যাপারে আইনগতভাবেই বাধ্য। কিন্তু যারা বিনাশ্রম কয়েদী রয়েছে তাদেরকে উৎসাহিত করে আস্থা অর্জনের মাধমে শ্রমে নিয়োজিত করতে হবে। জেলকোড মেনে সশ্রম ও বিনাশ্রম দুই ক্যাটাগরির কয়েদীদের নিয়েই আমরা এ কাজটি পরিচালনা করব। এক্ষেত্রে হাজতী বন্দিদেরও সুযোগ প্রদান করা হবে।
কারাবন্দীদের লভ্যাংশ যেভাবে দেয়া হবে।
কারা গার্মেন্টেস-এ উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন মূল্য আমরা নির্ধারণ করতে পারবো। পরিচালনা কমিটিতে গার্মেন্টস ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত আছেন এমন কয়েকজনকে রাখা হয়েছে যাতে করে উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন মূল্য নিরূপণ করা সহজ হয়। উৎপাদন মূল্য এবং বিক্রয় মূল্য এদুটোর পার্থক্য থেকেই লভ্যাংশ পাওয়া যাবে। আর সে লভ্যাংশ আনুপাতিক ও যৌক্তিকহারে কিছু অংশ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রির জন্য রেখে বাকি অংশ যারা শ্রমে নিয়োজিত থাকবে তাদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হবে। জেলকোড অনুযায়ী কর্মে নিয়োজিত কয়েদী ও হাজতী বন্দিকে অথবা তাদের পরিবারকে এককালীন, বাৎসরিক অথবা মাসিক ভিত্তিতে উৎপাদিত অর্থ প্রদান করা যাবে। পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালনা কমিটি একটি নীতিমালার আলোকে স্বচ্ছতার সাথে সম্পাদন করবে।
কারাবন্দীদের উপার্জিত অর্থ তার অথবা তার পরিবারের কাছে যেভাবে পৌঁছাবে।
কারাবন্দীদের উপার্জিত অর্থ তাদের পরিবার বা তাদের মনোনীত ব্যক্তিদের প্রদানের জন্য জেল কোড এবং প্রচলিত আইনের আলোকে একটি পদ্ধতি বের করা হবে। আইনের আওতায় তাদের উপার্জিত অর্থ তাদের অথবা তাদের পরিবারের মনোনীত সদস্যকে প্রদান করা হবে। স্বচ্ছতা, আন্তরিকতা ও জবাবদিহিতা থাকলে কারাবন্দিদের উপার্জিত অর্থ তাদের অথবা তাদের পরিবারের মনোনীত সদস্যের নিকট পৌঁছানো কঠিন হবে না।
পরিচালনায় যারা প্রত্যক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে তাদেরকে বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আইনগতভাবে সরাসরি তদারকি করতে পারবেন। আন্তরিক নজরদারি থাকলে কোন সমস্যার উদ্ভব হওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা নেই। আমার পরবর্তীতে যাঁরা বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তাঁদের প্রতিও আমার আবেদন থাকবে নিজের মনে করে এ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রিকে বিকশিত করতে আরো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার। তাহলে এ প্রকল্পটি পুনর্বাসন, সম্মান এবং মানব অধিকার নিশ্চিতকরণের প্রকল্প হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। নারায়ণগঞ্জ কারাগারে নির্মিত এ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রির কার্যক্রম সফল হলে দেশের অন্যান্য কারাগারগুলোতে এরূপ উদ্যোগ কীভাবে গ্রহণ করা যায়।
আমরা চেষ্টা করবো প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে এ ধারণাটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। সরকার অবগত হওয়ার পর যৌক্তিক ও কার্যকর মনে করলে এ প্রকল্পটি অন্যান্য কারাগারেও স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবে। যেসব কারাগারে সুপরিসর জায়গা রয়েছে সেখানে নারায়ণগঞ্জের আলোকে পরিকল্পিতভাবে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রি নির্মাণ করা যেতে পারে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ কারাগারের এ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি পরিচালনায় কোন প্রতিবন্ধকতা দেখা দিলে তা সমাধানের কার্যকর ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যেতে পারে।
কারাবন্দীদের জন্য মঙ্গলজনক এবং দেশের জন্য কল্যাণমুখী মনে করলে সরকার বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ও জেলা কারাগারগুলোতে এরূপ লেবার ইনটেনসিভ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রি বা অন্যরূপ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
এ উদ্যোগটি সরকারি না-কি বেসরকারি।
এটি একটি প্রশাসনিক উদ্যোগ। প্রশাসনিক এ উদ্যোগে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তিবর্গ সহযোগিতা করেছে। কারাগারে শুধুমাত্র ফৌজদারী অপরাধের কয়েদী বা হাজতীই থাকেন না। এখানে অনেক রাজনৈতিক বন্দীও থাকেন। রাজনৈতিক বন্দীরাও এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। সামাজিক এবং ব্যবসায়িকভাবে প্রতিষ্ঠিত অনেক রাজনৈতিক বন্দী এ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রি দেখে পরবর্তীতে সহযোগিতা করতে পারবেন।
কারা পরিবেশে এ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির প্রভাব।
কয়েদী ও হাজতীদের কারাবাসের পরিবেশকে আরো মানসম্মত করার জন্য সরকার অনেক কার্যকর প্রচেষ্টা গ্রহণ করে আসছে। আমাদের স্বল্প আয়তনের প্রিয় দেশে বিশাল জনগোষ্ঠীর বসবাস। বিভিন্ন অপরাধে কিংবা রাজনৈতিক কারণে কারাগারে অবস্থান করা বন্দীদের চাহিদা নিশ্চিতকরণে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। জেলা পর্যায়ে আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ও সামর্থ্যে তাদেরকে আইনগত সহযোগিতা প্রদান করে থাকি।
কারাগারে পেশাদার অপরাধীদের সংস্পর্শে এসে অপেশাদার অপরাধীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরবর্তীতে বড় বড় অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। কারাগারের অভ্যন্তরে অলস সময় কাটানোর ফলে তারা অনেকেই হতাশায় ভোগে। একটা রুটিন মাফিক কাজ নিশ্চিত করতে পারলে তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আসবে। এটা তাদের মনে উদ্দীপনা জাগাবে এবং প্রশিক্ষিত হয়ে অর্থ উপার্জন করে সমাজে পুনর্বাসিত হওয়ার স্বপ্ন দেখবে। পরবর্তীতে সমাজে পুনর্বাসিত হয়ে অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা অনেকেই হয়ত করবে না। এ প্রকল্পের ফলে কারাগারের অভ্যন্তরে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। “রিজিলিয়ান্স”কে সামনে রেখে কারাগারের অভ্যন্তরে আরও নতুন নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে কারা বন্দীদের পুনর্বাসিত করে তাদের মূলধারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব বলে বিশ্বাস করি।
জামদানি উৎপাদন কেন্দ্রের প্রেক্ষিত।
জামদানি শাড়ী নারায়ণগঞ্জ জেলার ব্র্যান্ডিং প্রোডাক্ট। তাই গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির সম্মুখে ক্ষুদ্র পরিসরে জামদানি উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করেছি। যাতে এ কারাবন্দীরা ব্র্যান্ডিং প্রোডাক্ট নির্মাণেও সম্পৃক্ত থাকতে পারেন। আশা করি সকলে মিলে আন্তরিকভাবে কাজ করলে এ উদ্যোগও সফল হবে।
কারাগারের অভ্যন্তরে এ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্র্রির উদ্বোধন সংক্রান্ত বিষয়াদি।
বিজয়ের মাসে এ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির উদ্বোধন হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খাঁন এমপি ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে এ ইন্ডাস্ট্রি উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মাননীয় সংসদ সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। আমি আড়ম্বর তেমন পছন্দ করি না, তার চেয়ে কাজকে বেশী গুরুত্ব প্রদান করি। তাই আমি ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে সমগ্র দেশে এটির কার্যক্রম ছড়িয়ে দেবার চেষ্ঠা করছি মাত্র। যাতে মানুষ জানতে পারে এবং মানুষের মতামতে ইতিবাচক হলে প্রচারণার জন্য আরো সুন্দর জায়গা এবং উপলক্ষ্য পাব।
লেখক: জেলা প্রশাসক, নারায়ণগঞ্জ।